জি, বলছিলাম ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরী এর কথা। ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরী অসাধারন মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে মানবিক বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন। ১৯৮৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় হয়েছিলেন দ্বিতীয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। মাস্টার্সেও তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। তাঁর অসাধারন একাডেমিক ক্যারিয়ারের জন্য তিনি কমনওয়েলথ স্কলারশিপ লাভ করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ এসেক্স থেকে ২০০০ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
পিএইচডিতে তাঁর অভিসন্দর্ভ ছিলঃ The Right to Life. Area of Specialization: Constitutional Law and Human Rights.
তিনি ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবি হিসেবে তালিকাভূক্ত হন। ১৯৯৪ সালে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে এবং ২০০৮ সালে সুপ্রীম কোর্টের আপীলেট ডিভিশনে তিনি আইনজীবি হিসেবে তালিকাভূক্ত হন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে এবং বিভিন্ন সরকারী- বেসরকারী ট্রেনিং ইন্সটিটিউট সমূহে রিসোর্স পারসন ছিলেন।
২০০৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মাসিক ল’ রিপোর্ট সিরীজ Bangladesh Legal Decesions (BLD) এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ল’ জার্নালে তাঁর অনেকগুলো আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে।
আর্টিকেল সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ Role of the Judiciary in the Development of Human Rights, Electoral Rights: Bangladesh Perspective, Practice of Democracy: Importance of Free and Fair Election in Bangladesh, Right to life and its Dimensions, The Least Dangerous Branch and the Power of Judicial Review: Impact on the Development of Fundamental Human Rights, Regional Position Paper on Status of Women in South Asia.
পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপ কমিটিতে কাজ করেন। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির লক্ষ্যে গঠিত আইনজীবী প্যানেলের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ২০০৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তাঁকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। ২০১৩ সালে তিনি জাতীয় সংসদের স্পীকার নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালে ইউনিভার্সিটি অফ এসেক্স ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরীকে তাঁর কর্মক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্যের জন্য অনারারী পিএইচডি প্রদান করে। তিনি ২০১৪ সালে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের চেয়ারপারসন হিসেবে তিনি ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। ২০১৫ সালে কমনওয়েলথ ডে পালন উপলক্ষে লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার আবে’তে রানী এলিজাবেথের উপস্থিতিতে অনুষ্টিত সভায় তিনি সভাপতির ভাষন দেন। তিনি ২০১৫ সালে নাইরোবীতে অনুষ্ঠিত আফ্রিকা অঞ্চলের কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের সম্মেলন উদ্বোধন করেন। ২০১৫ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওয়ার্ল্ড ঊইমেন লীডারশিপ কংগ্রেসে ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরীকে উইমেন লীডারশিপ এচিভমেন্ট এওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরী নোয়াখালীর চাটখিলের সন্তান। তিনি ১৯৬৬ সালে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর বাবা রফিকুল্লাহ চৌধুরী পঞ্চাশ দশকে জাঁদরেল ছাত্র নেতা ছিলেন। তিনি ১৯৫৭-৫৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৬১ সালে তিনি সিএসপি অফিসার হিসেবে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। ১৯৭২ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব ছিলেন। ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরীর মা অধ্যাপক নাইয়ার সুলতানা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বোটানিতে ১৯৬৪ সালে মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন।
ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরী ১৯৯১ সালে ফার্মাসিস্ট সৈয়দ ইশতিয়াক হোসেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরী বাংলাদেশের প্রথম মহিলা স্পীকার হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি যেভাবে দক্ষতার সাথে গত আট বছর যাবত জাতীয় সংসদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন তা’ আমাদের দেশের নারীদের জন্য অনুপ্রেরনা হিসেবে কাজ করবে। ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরীর অসাধারন সাফল্যে আমরাও গর্বিত। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরীর আগামী দিনগুলো আরো সাফল্যমন্ডিত হোক – এ’ কামনা করি।
সংগৃহীত_পোস্ট
Leave a Review