
ফুটবল, বয়স, হিপোক্রেসি এবং অন্যান্য-
আমি যখন থেকে ফুটবল দেখা শুরু করেছি তখন থেকে আমি অনেক অনেক লিজেন্ডদের লাইভ দেখেছি যারা অলটাইম গ্রেটেস্ট লিস্টে থাকে। রোনালদো ফেনোমেনোন, রোনালদিনহো, কাকা, জিদান, অরি থেকে মেসি, রোনালদো।
রোনালদো ফেনোমেনোন টপ টায়ারে ক্যারিয়ার শেষ করে দেয় ৩২ এ। এরপর ব্যাক টু ব্রাজিল। কাকা ও কাছাকাছি বয়সে আমেরিকা চলে যায়, জিদান ৩৫ এর পর রিটায়ারমেন্ট, দিনহো ৩৩ এ ব্রাজিল, অরি ৩৪ এ আমেরিকা। ব্যাপার টা এইখানেই শেষ না। এরা ইউরোপ ছাড়ার এক দুই সিজন বা তার বেশি সময় ধরে আসলে টপ লেভেলের পারফরম্যান্স ও করেনাই। জিদান ছাড়া কেউ ই টপ পারফর্মার কন্ডিশনে থাকা অবস্থায় ক্যারিয়ার শেষ করে নাই।
এই যায়গায় আপনি যদি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কে ভাবেন, তাহলে আপনি একটা ইনক্রেডিবল ব্যাপার দেখবেন। সে ৩৮ এ সৌদি আরবে যাচ্ছে, যখন তার আগের জেনারেশন এর গ্রেট রা তার ৫ বছর আগে খেলাই শেষ করে দিতো। আর ইউরোপ ছাড়ার আগের সিজনে সে তার দলের টপ স্কোরার ছিলো। ইনক্রেডিবল ব্যাপার। তারপর ও কেনো তাকে নিয়ে কথা হচ্ছে?
ডিস্কাশনের প্রথম পয়েন্টেই ঝামেলা আছে। যে প্লেয়ার ৩৪ এ ক্যারিয়ার রেস্ট দিতে চায় এটা কি কোনো ডিস্ক্রেডিট কিনা। আর কেউ ৩৯/৪০ পর্যন্ত ক্যারিয়ার টানতে পারাটা খুব ক্রেডিটের কোনো ব্যাপার কি না।
দেখেন প্রথম পয়েন্ট অর্থাৎ আর্লি ক্যারিয়ার শেষ করার ন্যারেটিভ সবার জন্য এক না। ফেনোমেনন তার ক্যারিয়ারের ব্রাইটেস্ট পয়েন্টে ইঞ্জুরিতে নিজেরে হারাইছে, এই লোক ৩২ এ ক্যারিয়ার শেষ করছে এইটারে আপনি উদাহরণ হিসেবে দেখাইতে পারেন না। জিদান টপ লেভেলের পারফরম্যান্স দিয়াও ৩৫ এর পর আর খেলেনাই কারন সে ভাবছে যে আমি আর ১০০% দিতে পারবোনা। এই ক্যারিয়ার রে আপনি লংজিভিটি ছিলোনা টার্মে ব্যাবহার করতে পারবেন না।
জাভি, ইনয়েস্তা যে কন্ডিশনে ইউরোপ ছাড়ছে এইটারেও আপনি মকারির এক্সাম্পল হিসেবে ব্যাবহার করতে পারবেন না।
প্লেয়ারদের ক্যারিয়ার মিড থার্টি তে ইতি টানার ব্যাপার টা ইন্ডিভিজুয়াল। এখানে কোনো লজ্জা নাই।
আবার লং ক্যারিয়ার মানেই কি আর্লি ইতি টানা ক্যারিয়ার থেকে বেটার? ফার্নান্দো তরেস ৩৫ এ ও ইউসিএল খেলা দলে খেলছে, এমন কি পারফর্ম করছে তার মানে এই না যে সে ফেনোমেনাল রোনালদো কে ছড়ায় গেছে। দুজন ই গ্রেট, স্টিল।
রোবেন, রিবেরি, বেল এরা ৩৫/৩৫ এ এসেও বায়ার্ন,রিয়াল এর মত বড় ক্লাবে খেলছে বলে তারা কি কাকা, দিনহো দের মত আর্লি ক্যারিয়ার শেষ করা গ্রেট দের ছাড়ায় ফেলছে কিনা ক্যারিয়ারে? সম্ভবত না।
তারমানে হইলো, আপনার ক্যারিয়ার ছোট আর বড়। এটা আসলে কোনো মাপকাঠি ই না। বা শো অফের কিছু নাই। যারা লং ক্যারিয়ার পায়, তাদের ভাগ্য টা ও ইম্পর্ট্যান্ট। জিওগ্রাফি ও ইম্পর্ট্যান্ট। লাতিন রা আর্লি শুরু করে, আর্লি শেষ করে। এইটা জিওগ্রাফিকাল ব্যাপার। ইউরোপীয় রা ন্যাচারালি ৩৫ পর্যন্ত সার্ভাইভ করে। আবার ভাগ্য ও আছে। আগুয়েরোর মত হার্টের কন্ডিশন বা রোনালদোর মত ইঞ্জুরি তে পরার পর ক্যারিয়ার শেষ করলে বলার কি আছে?
কেউ ক্যারিয়ার ৪০ এ টানলেও রেস্পেক্টফুল ব্যাপার, কেউ ৩০ এ শেষ করলেও তাই। কেউ ৩২ এ জাপানে গেলেও মকারির কিছু নাই, কেউ ৪০ এ সৌদি গেলেও নাই।
তবে,
রোনালদো যখন স্টেটমেন্ট দিছিলো যে সে “ডিগনিটির” সাথে ক্যারিয়ার শেষ করবে, সে কাতার বা আমেরিকা যাবেনা। এই স্টেটমেন্ট টা প্রচন্ড শেমফুল একটা স্টেটমেন্ট যেখানে সকল লিজেন্ডদের ই ইন্সাল্ট করা হইছে।
আমেরিকা বা কাতারে যায়নাই এরকম ফুটবল লিজেন্ড খুব কম ই আছে। রিয়াল লিজেমড রাউল ও ৩৪ এ কাতারে গেছিলো যে রোনালদোর সরাসরি টিমমেট। তার মানে কি? এরা কেউ ই ডিগনিটি নিয়ে অবসরে যায়নাই? এরা সবাই লজ্জাজনক শেষ করছে ক্যারিয়ার? তাইলে সে নিযে এখন কি করতেছে? একমাস আগেও সে বললো যে টাকার জন্য আমি যাবোনা,আমি এখনো টপ পারফর্ম করতে পারি। তাইলে এখন কি হলো?
রোনালদো এবং তার ফ্যানবেজের মুখ সামলানো অনেক আগেই জরুরি ছিলো কারন প্রতিটা কথা অনেক আগে থেকে ব্যাকফায়ার করতেছে।
প্লেয়ারদের ব্যাসিক, ন্যাচারাল জিনিস নিয়ে মকারি এদের থেকেই শুরু। কে কোন বয়সে কোথায় খেলবে,কে কোথায় যাবে এগুলো নিয়েও মকারি আমি আগে কখনো দেখিনাই। মেসি নাকি গোবর লিগে খেলতো! কি ক্লাসওয়ালা বান্টার। আহারে!
শুরু করছিলো ব্যালন থেকে বুট ভালো কারন ভোট লাগেনা। প্লেয়ার এবং ফ্যানবেজ দু ক্যাম্প ই। মেসি বুট এ আগায় গেলো। তাও যখন রোনালদো থ্রি পিট জেতা হিউজ রিয়াল মাদ্রিদে তখন ওই লিগেই দেল্ফিউ, ডেনিশ সুয়ারেজ রে সাথে নিয়ে গোল্ডেন বুট জিতে লিগ জিতাইছে।
এরপর ১৬ তে শুরু হইলো গোট ডিবেট ওভার নামক বস্ত। স্বাভাবিকভাবেই মেসির ক্যারিয়ারের তখন ও ৮/৯ সিজন বাকি। দুই ওয়ার্ল্ডকাপ এমনেও খেলতে পারে। কোপা আমেরিকা ও দুইটা অলরেডি শিডিউলড ২২ পর্যন্ত। কিন্ত না, ডিবেট শেষ। এই টার্ম টাই আবিস্কার হইতোনা। এক্টিভ দুই প্লেয়ার অবসরের আগ পর্যন্ত ডিবেট ওভার ক্যাম্নে হয়? এরা আলাপ করা শুরু করলো যে মেসি আর্জেন্টিনার বোঝা, এরা আলাপ করা শুরু করলো মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনা ভালো খেলবে, এরা আলাপ করা শুরু করলো মেসির যায়গায় রোনালদো হইলে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিততো। এই আলাপ টিভির পান্ডিতগুলাও শুরু করলো। এন্ড ব্যাং। ডিবেট ওভার হইলোই। এমন ভাবে হইলো, এত বাজে ভাবে হইলো যেটা আমরাও সপ্ন দেখিনাই।
মেসি কন্টিনেন্টাল ট্রফি জিতলো একই সাথে গোল্ডেন বুট আর বল সহ, মেসি দুইটা ব্যালন আরো জিতলো, মেসি গোল্ডেন বুট জিতলো দুইটা এবং মেসি ওয়ার্ল্ড কাপ জিতলো। তাও কিভাবে? নক আউটের প্রতি রাউন্ডে গোল মাইরা। তাও কিভাবে? নেদারল্যান্ডস, ক্রোয়েশিয়ার লগে ইম্পসিবল এংগেল, রানে এসিস্ট মাইরা। তাও কিভাবে? ফাইনালে ব্রেস মাইরা। তাও কিভাবে? গোল্ডেন বল সহ।
মেসি যে বিশ্বকাপের সেরা প্লেয়ার ওই বিশ্বকাপের ওর্স্ট ইলেভেনে রোনালদো আছে। মেসি যে বিশ্বকাপে ইনসেন লিডারশীপ দেখায়া হিস্ট্রিবুকে গেলো ওই বিশ্বকাপের নক আউটে তার দলে যায়গা ই হয়নাই। লিডারশীপ, বোঝা, এই সেই। দেখো কেমন লাগে? কারো তো বলাও লাগতেছেনা কিছু।
মেসি যে ডিসেম্বারে বিশ্বকাপ জিতছিলো সেই ডিসেম্বরে রোনলাদো ইউরোপে ক্লাব না পেয়ে সৌদি তে গেছিলো যেখানে যাওয়াটারে সে ভাবতো ডিগনিটি থাকবেনা? কেমন লাগে শুনতে?
এখন কথা বার্তা শেষ হয় রিটায়ারমেন্টে দিয়া। নির্লজ্জের মত এক লাইন মারতে থাকে।
মেসি ১৬ তে অবসর নিয়ে বিরাট পাপ করে ফেলছিলো! সেই রিটায়ারমেন্ট ভেংগে এসে মেসি ওই ন্যাশনাল টিম রে ৩৬ বছর পর ওয়ার্ল্ড কাপ জিতাইছে, ২৮ বছর পর কোপা জিতাইছে, তিনটা মেজর ট্রফি জিতাইছে৷ দুইটা ব্যালন ডি অর জিতেছে। এইটা হলো রিডেম্পশন। এর নাম হ্যাডম,এর নাম ব্যাটা মানুষ, এর নাম জেদ, এর নাম মোটিভেশান। কইরা দেখাইতে কইয়ো। বসে আছে৷ ওয়েট করতেছি।
আমি তো যথেস্ট ফিল্টার লাগায় কথা কই। যথেস্ট রেস্পেক্ট রাখি। প্লেয়ার রোনালদোর এচিভমেন্ট নিয়া কোনো মকারি করিও না। যান না কমন গ্রুপে। নতুন করে কিছু লেখাও লাগতেছেনা। যে পরিমান ডিসরেস্পেক্ট, মকারি, মিথ্যাচার, ফলসিফিকেশন, প্রপাগান্ডা চলছে ওগুলা ডিলেট করেও কুল পাচ্ছেনা। নতুন পোস্ট ই দেয়া লাগতেছেনা কারো।
এইসব ব্যাকফায়ার খাওয়ার কারন কি জানেন?
আপনারা ভাবছিলেন যে মেসি লুসার। আপনার ভেবে নিছিলেন যে মেসি ১৬ এর পর আর দাড়াইতে পারবেনা। আপনারা আপনাদের আইডল এর সাক্সেস এর পর ভাবছিলেন যা খুশি বলা যায়,করা যায়। জাস্টিস এর সু্যোগ নাই। আপনারা ভাবছিলেন সাক্সেসের একটা ন্যারেটিভ দাড় করায় রোনলাদোরে কাল্ট ফিগার বানায় রাখবেন আর মেসিরে “কান্ট ” ফিগার। কিন্ত গল্পে তো ভাই বিরাট এক টুইস্ট ছিলো। এই গল্পের রাইটার তো প্লট সৃস্টি করছেন এভাবেই।
মেসির প্রত্যেক টা ব্যার্থতা ফিরে এসেছে মহা সফলতা হয়ে, আাপনাদের তৈরি করা প্রতিটা ন্যারেটিভ মেসি আপনাদের মত ই এচিভ করে ফেললো। গল্পের কাল্ট ফিগারের যায়গা পরিবর্তন হয়ে গেলো আপনার ন্যারেটিভ এ।
অন দা আদার হ্যান্ড? প্লেয়ার, প্লেয়ার ক্যাম্প এবং ফ্যানবেজ ব্যার্থতার যে সব সংজ্ঞা তৈরি করে রেখেছিলো সেগুলাই ব্যাকফায়ার করতেছে। রোনালদো লাস্ট সিজনে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে তার পর এই সিজন সাধারন পারফরম্যান্স এর পর যদি এই জানুয়ারি তে স্বাভাবিক ভাবে সৌদি তে যেতো সেটা হতো একটা ইনক্রেডিবল স্টোরি। কিন্ত আপনি যখন নিজেই বলে দিছেন যে ওসব যায়গা যাওয়া ডিগ্নিটির খেলাপ, আপনারা কি আশা করেন?
আপনি ওয়ার্ল্ড কাপের আগে চতুর্থ শ্রেনীর এক সাংবাদিক নামের কলংক যারে আপনি টাকা দিয়া পুষেন তারে এনে স্টান্ট দেখাইলেন। সবাইরে বুঝাইলেন টেন হাগ আপনারে বেঞ্চ করছে এটা অন্যায়। আপনি ক্যাপাবল। এবং ওয়ার্ল্ড কাপে নাইমা এমন শিটশো দেখাইলেন যে আপনার ন্যাশনাল কোচ ও আপনারে বসায় দিলো। তখন আসলে ব্যাপার গুলো কি দাড়াচ্ছে?
এই ক্যাম্প, এই ক্যাম্পের ফ্যানেরা সারাজীবন সাক্সেসের ন্যারেটিভ দাড় করাইছে আরেকজন রে আক্রমন করে। জাভি ইনয়েস্তা লোয়াল লিগে গেছে আমি এইখানে আছি, অমুকে এই বয়সে এই করে সে ওই করে, এই ডিগ্নিটি ওই পারফরম্যান্স, আমি ওরে চিনিনা, ও কোচ ভালোনা। ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং শেষ পর্যন্ত ক্লাবে বেঞ্চড হয়ে, স্যাকড হয়ে, ন্যাশনালে বেঞ্চড হয়ে টাকা কামাইতে সৌদি যাওয়া লাগতেছে এগুলারে কার্মা মনে হয়না?
আমার তো মনে হয়।
Leave a Review